প্রকাশিত: Sat, Jun 29, 2024 10:20 AM
আপডেট: Tue, Jul 2, 2024 7:04 PM

[১]বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে পরস্পরের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দেয়ার অভিযোগ

রাশিদুল ইসলাম: [২] আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেছেন। সূত্র: সিএনএন, বিবিসি

[৩] ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীর বিষয়ে জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, আদালতে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করেন বাইডেন।

[৪] বিতর্কে ট্রাম্প তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে যে আমেরিকার মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। ‘সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি’। অন্যদিকে, শেষ বক্তব্যে জো বাইডেন আমেরিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন যে তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সাথে দাবি করেন যে ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দিবেন।

[৫] যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ড কেইটি কে লিখেছেন যে এবারের বিতর্কের ফরম্যাট ছিল আমেরিকানদের জন্য তুলনামূলক ভালো। তবে সঞ্চালকরা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেননি এবং এটা ছিল জো বাইডেনের জন্য একটি খারাপ রাত।

[৬] বাইডেনের অনেক জবাবই পরিষ্কার ছিল না। তাকে বয়স্ক মনে হচ্ছিলো। তবে বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপ তার জন্য কিছুটা ভালো ছিল এবং তিনি কিছুটা শক্তি পেয়েছিলেন। তবে এটি হতে হতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।

[৭] সাবেক ডেমোক্রেট কংগ্রেসওম্যান স্টেফাইন মারফি বিবিসিকে বলেছেন কিছু মুহূর্ত ছিল যেখানে জো বাইডেন তার বয়স তুলে ধরেছেন। তাকে বোঝাটা কষ্টসাধ্য ছিল। অন্যদিকে তার মতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু মন্তব্য করেছেন যা ‘সত্যি নয়’ এবং এগুলো সত্যতা যাচাই করা উচিত। তিনি বলেন তার উদ্বেগের জায়গা হলো নির্বাচনের ফল গ্রহণ করবেন কি না তা বলতে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনীহা দেখিয়েছেন।

[৮] সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান রোডনি ডেভিস বলেছেন বিতর্কটি ছিল ‘ ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিষ্কার জয়’। আমেরিকাজুড়ে ডেমোক্রেটদের জন্য দুঃখজনক বিতর্কের ধরনটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সহায়তা করেছে, বলেন তিনি।

[৯] বিবিসির ম্যাডেলাইন হ্যালপার্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর কোরউইন স্মিডট বলেছেন যে জো বাইডেন তার অনেক দুর্বলতা দেখিয়েছেন এবং খুব বেশি শক্তির জায়গা দেখাননি। ভিজ্যুয়াল, কণ্ঠ ও জবাব দেয়ার গতির কারণে তাকে অনুসরণ করাটা কঠিন ছিল। অনেক তথ্যভিত্তিক জবাব ও পয়েন্ট প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিয়েছেন। কিন্তু বলার ধরনের কারণে সেগুলো দ্রুত হারিয়ে গেছে। 

[১০] ট্রাম্পের পারফরমেন্স থেকেও অনেক বেশি শক্তির জায়গা পাওয়া যায়নি এবং তিনিও কিছু দুর্বলতা প্রদর্শন করেছেন। বাইডেনের প্রশ্নের জবাবে তার উত্তরগুলো দৃঢ় ছিল না। কিন্তু উত্তরগুলো তার ভোটারদের কিছু উদ্বেগ ও ইস্যুকে স্পর্শ করে গেছে, বলেন প্রফেসর স্মিডট।

[১১] দুইজনই গর্ভপাত, অভিবাসন, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ, অর্থনীতি এমনকি নিজেদের গলফ খেলা নিয়েও একে অপরকে খোঁচা দিয়েছেন। একের পর এক কথার বাণ ছুড়লেও ট্রাম্পের অধিকাংশই বক্তব্য ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরা। তবে সেগুলোর জবাব দিতে গিয়েই মাঝেমধ্যে হোঁচট খাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষ জো বাইডেন।

[১২] বয়সী দুই প্রার্থী একে অপরের প্রতি শানিয়েছেন ব্যক্তিগত আক্রমণ। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন জনমত জরিপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়েই মূলত তারা বিতর্কে লিপ্ত হন। বাইডেনের নড়বড়ে পারফরম্যান্সে কিছুটা হলেও বিচলিত ডেমোক্রেটরা, এমনকি ৮১ বছর বয়সী বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরবর্তী চার বছর সামাল দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।

[১৩] যদিও বিতর্কের পর বাইডেনের প্রচার দল এবং সহযোগীরা অনেকটা সাহসী মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন নড়বড়ে অংশগ্রহণ সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তাদেরকে একটা বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

[১৪] বিতর্ক শুরুর প্রথম আধাঘণ্টার মধ্যে বাইডেনকে বেশ কয়েকবারই কর্কশকণ্ঠে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেতে দেখা যায়। তবে মাঝামাঝি সময়ে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করার মধ্যে দিয়ে তিনি পায়ের তলায় মাটি পেতে শুরু করেন। বাইডেন এ সময় প্রতিপক্ষকে ‘অপরাধী’ বলেও সম্বোধন করেন।

[১৫] এর জবাবে মাদককাণ্ড এবং আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের ছেলে হান্টার বাইডেনের আইনি ঝামেলায় জড়ানোর বিষয় সামনে আনেন। কিছুক্ষণ পরই বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এমনকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও তার (ট্রাম্পের) প্রচারে সমর্থন দেননি। তারা তাকে (ট্রাম্প) ভালো করেই জানেন, তার সঙ্গে কাজও করেছেন। তারপরও কেন সমর্থন দেননি, এমন প্রশ্ন তোলেন বাইডেন।

[১৬] এরপরই বাইডন প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার স্রোত বইয়ে দেন ট্রাম্প। যদিও সেসবের অধিকাংশই ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরা এবং অনেকদিন ধরেই বলে আসা পুরনো বিষয়। অভিবাসীদের কারণে আমেরিকায় অপরাধ বাড়ছে, এমন সমালোচনাও ছিল এসবের মধ্যে। শিশুহত্যায় ডেমোক্রেটদের সমর্থনের অভিযোগ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে আসলে তিনি জিতেছিলেন বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।

[১৭] প্রেসিডেন্ট হতে নিজেদের ফিটনেস প্রমাণের জন্য বাইডেন এবং ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প- দুইজনই চাপে আছেন। বাইডেনের বয়স এবং তীক্ষ্নতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন সময়, অন্যদিকে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও একের পর এক আইনি সমস্যা নিয়ে বিতর্কিত ট্রাম্প।

[১৮] ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে সমর্থকদের হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই ঘটনার দায় নিজে ঘাড়ে নিতে অস্বীকার করেন, পাশাপাশি দাবি করেন, ওই ঘটনায় অনেক নিরাপরাধ মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জবাবে জো বাইডেন বিদ্রুপ করে বলেন, ‘এই মানুষটির আমেরিকার গণতন্ত্র সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই।’

[১৯] ট্রাম্প বলেন, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, যার ফলে অনেক অপরাধী প্রবেশ করেছে। আমি একে বাইডেনের অভিবাসন অপরাধ বলি। জবাবে বাইডেন বলেন, তিনি আবারও বাড়াবাড়ি করছেন, মিথ্যা বলছেন। বিভিন্ন জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, স্থানীয়দের তুলনায় অভিবাসীদের অপরাধের হার বেশি নয়।

[২০] বিতর্কের এক পর্যায়ে বাইডেন ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন। প্রশ্ন করা হয়, হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করতে বাইডেন কী করবেন। উত্তরে বাইডেন বলেন, একমাত্র হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না। বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তার জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, হামাসকে নির্মূল করতে হবে। সম্পাদনা: ইকবাল খান